সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তার বাসভবন যমুনায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় নির্বাচনের সুস্পষ্ট ঘোষণা না আসায় হতাশা প্রকাশ করেছে বিএনপি। সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ডিসেম্বরের মধ্যে একটি জাতীয় সংসদ গঠনের জন্য অবিলম্বে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে দলটি।
ডিসেম্বরে নির্বাচন না হলে বিএনপির পক্ষে এই সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে বলে সতর্ক করেছে দলটি। একইসঙ্গে দলটি বলেছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের পর উপদেষ্টা পরিষদের এক বিবৃতিতে যে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে, তা অস্পষ্ট ও বিভ্রান্তিকর। মূলত সরকার পরিচালনায় নিরপেক্ষতার ঘাটতি ও দুর্বলতা থাকায় জনমনে সংশয় দেখা দিয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (২৭ মে) বিকেলে বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে দলটির নেতারা এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চান, এমন একটি খবর যখন দেশে তুমুল আলোচনার জন্ম দেয়, তখন বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার আলোচনার প্রসঙ্গে তার প্রেস সচিবের মাধ্যমে সরকারের যে বক্তব্য পাওয়া গেছে, তাতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো রোডম্যাপের ঘোষণা না থাকায় বিএনপি হতাশ হয়েছে।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, যেহেতু সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, তাই সংস্কার ও নির্বাচন প্রক্রিয়া দুটোই একইসঙ্গে চলতে পারে। একইসঙ্গে পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তির ও ব্যক্তির অর্থাৎ দল ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচার প্রক্রিয়া চলমান থাকবে।
সরকারের স্বাভাবিক কাজের পরিবেশ বিনষ্ট হওয়ার যে অভিযোগ সরকারের পক্ষ থেকে উত্থাপন করা হয়েছে, সেটা মূলত সরকারের নিজস্ব অর্জন বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতিতে পরাজিত শক্তির ইন্ধনে এবং বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সরকারের ওপর দায়িত্ব পালনকে অসম্ভব করে তোলা হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আমরা মনে করি, যত দ্রুত সম্ভব একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমেই পরাজিত শক্তির ইন্ধন এবং বিদেশি যড়যন্ত্র বন্ধ করা সম্ভব। সেজন্য অবিলম্বে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
দেশকে স্থিতিশীল রাখতে, নির্বাচন, বিচার ও সংস্কার কাজ এগিয়ে নিতে এবং চিরতরে এদেশে স্বৈরাচারের আগমন প্রতিহত করতে ফ্যাসিবাদবিরোধী বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সেলিনা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ ও মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ।