সম্পত্তি লিখে না দেয়ায় কুমিল্লায় বাবাকে হাত-পা বেঁধে শরীরে গরম পানি ঢেলে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে সন্তানদের বিরুদ্ধে। শুক্রবার (১১ এপ্রিল) লোমহর্ষক এ ঘটনার ১ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) দুপুরে কুমিল্লার লাকসাম পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের গোপালপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে পড়ে থাকা বৃদ্ধ বাবার হাত ধরে টানাটানি করছেন সন্তানেরা। একপর্যায়ে গায়ে থাকা গেঞ্জি টানতে টানতে ছিঁড়ে ফেলা হয়। এরপর বাবাকে টেনে-হিঁচড়ে তার হাত-পা বাঁধা হয় এবং গরম পানি বাবার মাথা ও মুখে ঢালছেন তারই সন্তানেরা। একই সময় ভেসে আসে বৃদ্ধ বাবার আত্মচিৎকার।
লোমহর্ষক ওই নির্যাতনের ভিডিওটি শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তেই তা ভাইরাল হয়। পরে স্থানীয়রা ওই বৃদ্ধকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
জানা গেছে, নির্যাতনের শিকার ওই বৃদ্ধের নাম আবদুল জলিল (৬০)। অভিযুক্তরা হলেন- আবদুল জলিলের ছেলে প্রবাসী শান্ত (২৮), নোমান (২০) ও রকি (১৬), মেয়ে নাজমিন (২৬), নুপুর (১৩) এবং স্ত্রী রিনা আক্তার (৪৫)।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার ভুক্তভোগী আবদুল জলিল বাদী হয়ে সন্তান ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। স্থানীয়রা জানায়, গোপালপুর গ্রামের মৃত হাজী ওয়ালীউল্লা ছেলে আবদুল জলিলের নামে বসতবাড়ি ছাড়াও ১ একর ২০ শতাংশ সম্পত্তি রয়েছে। স্ত্রীসহ তার সংসারে তিন ছেলে ও ২ মেয়ে রয়েছে। এরমধ্যে বড় ছেলে শান্ত প্রবাসে থাকেন। বিদেশে থাকা অবস্থায় ওই সম্পত্তি তার নামে লিখে দিতে বিভিন্ন সময় আবদুল জলিলকে হুমকি দেন শান্ত। সেই সঙ্গে একই দাবিতে বাড়িতে থাকা জলিলের অন্য সন্তানেরাও তাকে মারধর করেন। এ নিয়ে বাবার ভরণপোষণও বন্ধ করে রেখেছেন তারা।
বিষয়টি নিয়ে সন্তান ও স্ত্রীর সঙ্গে জলিলের দ্বন্দ্ব শুরু হলে এলাকায় একাধিকবার সামাজিকভাবে শালিস দরবারও হয়েছে। প্রতিবেশীরা বলছেন, ঘটনার দিন স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে জলিলের কথা-কাটাকাটি হয়। এ সময় জলিল ঘরের দরজা জানালা ভাঙচুরের চেষ্টা চালাতে গেলে ছেলে-মেয়েরা বাবার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে এমন নির্মম নির্যাতন চালায়।
নির্যাতনের শিকার আবদুল জলিল বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমার সন্তানেরা সম্পত্তি নেয়ার জন্য আমাকে বিভিন্ন সময়ে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছিল। আমার স্ত্রী রিনা আক্তার এর কোনো প্রতিবাদও করেনি। আমাকে তারা ভরণপোষণও দেয় না। ছোটখাটো ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে ঝামেলা করে। ওইদিন আমার সন্তানেরা বাড়ির উঠানের মধ্যে আমাকে মারতে মারতে হাত-পা বেঁধে অনেক মেরেছে। হাত-পায়ে শরীরে এখনো দাগ আছে।’
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে লাকসাম থানার ওসি নাজনীন সুলতানা বলেন, নির্যাতনের ভিডিওটি আমাদের নজরে এসেছে। পারিবারিক কলহ থেকে এমন লোমহর্ষক ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় নির্যাতিত আবদুল জলিল থানায় ছেলে ও স্ত্রী-সন্তানদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও বিবাহযোগ্য কন্যাসহ পারিবারিক শান্তি বজায় রাখতে শুক্রবার অভিযোগ প্রত্যাহার করেছেন তিনি। এলাকায় বিষয়টি সামাজিকভাবে বিরোধ নিরসনের পাশাপাশি পরিবার নিয়ে থানায়ও এসেছেন। অন্যদিকে তার স্ত্রী ও সন্তানেরাও বিষয়টি নিয়ে অনুতপ্ত।